টমেটোর পাহাড়, ক্রেতার দেখা নেই
কৃষি প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:
চারদিকে যতদূর চোখ যায় টমেটোর ক্ষেত। এত পরিমান জমিতে টমেটো লাগানো হয়েছে আর সেই সাথে ফলনও এত বেশী যে আলাদা করে বসাতে হয়েছে টমেটোর হাট। ক্ষেতের ফলন দেখে চাষিদের মুখ খুশিতে চকচক করে উঠলেও হাটে এসে নিমিষে সেই হাসি উধাও।
প্রতি হাটে বিপুল পরিমাণ আমদানি হলেও এর ক্রেতা নেই। অথচ মৌসুমের শুরুতে এই টমেটো বিক্রি হয়েছে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা মণ। এখন এর দাম এসে ঠেকেছে আড়াই শ থেকে তিন শ টাকা মণে। বগুড়া ধুনটের টমেটোচাষিদের এই হতাশার একমাত্র কারণ টানা হরতাল-অবরোধ।
ধুনট উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল করিম জানান, উপজেলার চৌকিবাড়ী ইউনিয়নে এবার সবচেয়ে বেশি টমেটো চাষ হয়েছে। কৃষকরা কীটনাশক ব্যবহার না করে টমেটো উৎপাদনে সাফল্য পেয়েছেন। বিপুল পরিমাণ জমিতে টমেটো চাষের কারণে সেখানেই বাজার বসানো হয়েছে। প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার পাঁচথুপি স্কুল মাঠে বসে এ টমেটোর হাট। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা এসে এখান থেকে টমেটো কেনেন। স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতি হাটে প্রায় ছয় হাজার মণ টমেটো বিক্রি হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সকালে পাঁচথুপি টমেটোর হাটে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথম দিকে তাঁরা এই হাটে ভালো দামে টমেটো বিক্রি করেছেন। কিন্তু টানা হরতাল-অবরোধের কারণে তাঁদের দুর্ভোগ নেমে এসেছে। কৃষকরা জানান, আগে যেখানে প্রতি হাটে ৬০ থেকে ৭০ ট্রাক টমেটো রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যেত, এখন এর পরিমাণ অর্ধেকেরও কম। আমদানি থাকলেও ক্রেতার অভাব। এ ছাড়া ট্রাকভাড়াও বেড়েছে দ্বিগুণ ফলে লোকসান গুণতে হচ্ছে চাষিদের।
পাঁচথুপি গ্রামের টমেটোচাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গতবার এক বিঘে জমিতে টমেটো আবাদ করে সব খরচ বাদ দিয়ে লাখ টাকা লাভ হয়। এবারও সে আশায় তিন বিঘে জমিত টমেটোর চাষ করেচি। গত বছরের চায়া খরচও কম হচে। কোনো প্রকার ওষুদ দেওয়া লাগেনি। ফলনও ভালো হচে। প্রথম দিকে ভালোই দাম পাচ্ছিলাম। কিন্তুক হঠাৎ করে হরতাল আর অবরোধ দেওয়ায় বাজারোত কেউ টমেটো কিনবের আসে না। তাই দাম পড়ে গেছে। এবার আর লাভ-টাব হবি না।’
ওই বাজারে টমেটোর পাইকারি ক্রেতা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাজার থেকে প্রথম দিকে প্রতি মণ টমেটো প্রায় তিন হাজার টাকায় কেনা হয়েছে। হরতাল-অবরোধের কারণে আর বেশি মাল কেনা যাচ্ছে না। কারণ বাইরের বাজারে মালপত্র নিয়ে যেতে আগে যে ট্রাক ভাড়া ছিল, হরতাল-অবরোধের কারণে তা এখন দ্বিগুণেরও বেশি। আবার জীবনের ঝুঁঁকিও আছে। ক্রেতা কমে যাওয়ায় এখন কম দামে টমেটো বিক্রি হচ্ছে।’
বাজার থেকে টমেটো পরিবহনের জন্য আসা ট্রাকচালক আব্দুল মান্নান ভাড়া বৃদ্ধির সত্যতা স্বীকার করে জানান, আগে ঢাকা যেতে ১০ হাজার টাকা ট্রাক ভাড়া ছিল। এখন তা ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। কারণ ট্রাক মালিকরা পোড়ার ভয়ে ট্রাক বের করতে চান না। চালক-হেলপাররা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেতে চান না। এ ছাড়া হাটের মালপত্র নিতে হলে সকাল থেকে খালি ট্রাক নিয়ে এসে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকতে হয়। ওই সময় আর কোনো ভাড়া হয় না। এ কারণে ভাড়া বেড়েছে।
এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কোনো ধরনের কীটনাশক ছেটানো ছাড়াই ভালো ফলন হয়েছে। শুরুর দিকে কৃষকরা কিছুটা দাম পেলেও এখন সেই দাম নেই।’ আর এজন্য সংশ্লিষ্ট সকলে দায়ী করছে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতাকে।
প্রতিক্ষণ/এডি/আজম